চীন-পাকিস্তান মোকাবিলায় মার্কিন সশস্ত্র ড্রোন কিনছে ভারত
চিরবৈরী প্রতিবেশী চীন ও পাকিস্তানকে প্রতিরোধে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ত্রিশটি সশস্ত্র ড্রোন কিনতে যাচ্ছে ভারত। এ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বরাতে এনডিটিভি ও ব্লুমবার্গ এমন খবর দিয়েছে।
৩০০ কোটি মার্কিন ডলারের ৩০টি এমকিউ-৯বি প্রিডেটর ড্রোন ক্রয়ে আগামী মাসে অনুমোদন দেবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি। সান-ডিয়াগোভিত্তিক জেনারেল অ্যাটোমিকস এসব অস্ত্র নির্মাণ করেছে।
ভারতের কাছে এখন যেসব ড্রোন আছে, তা নজরদারি ও শত্রুপক্ষের অবস্থান নির্ণয়ে ব্যবহৃত হয়। যুক্তরাষ্ট্র থেকে নতুন করে এসব ড্রোন আনা হলে তা দেশটির সামরিক সক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে পারবে।
চীন-পাকিস্তান সব পরিস্থিতির বন্ধু হলেও দুই দেশই ভারতের চিরশত্রু। এই শত্রুদের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যেই আকাশ ও স্থলপথে নিজের শক্তি বাড়াচ্ছে ভারত।
যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত প্রতিরক্ষা অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে ভারত। বিশেষ করে ভারত মহাসাগর ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার কিছু অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবিলায় দুদেশকে একজায়গায় নিয়ে এসেছে।
এক দশকের মধ্যে ২৫ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের সামরিক আধুনিকায়নের পথে আছে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার।
এমকিউ-৯বি ড্রোন একটানা ৪৮ ঘণ্টা উড়তে পারে আর এক হাজার ৭০০ কিলোগ্রাম বিস্ফোরক বহন করতে পারে।
এতে সহজে ভারত মহাসাগরের দক্ষিণাঞ্চলে চীনা যুদ্ধজাহাজ পর্যবেক্ষণ করতে পারবে। এছাড়া হিমালয় অঞ্চলে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণে সেনাবাহিনীকে সহায়তা করতে পারবে।
চলতি মাসের মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের ভারত সফরের কথা রয়েছে। আর শুক্রবার ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীদের সঙ্গে ভার্চ্যুয়াল সম্মেলনে অংশ নেবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ঠেকাতে চার দেশের একটি জোট গঠনের কাজ এগিয়ে নিতেই বেঠকে জোর দেওয়া হবে। ভাচ্যুয়াল মাধ্যমে হলেও বাইডেনের প্রথম সম্মেলনগুলোর একটি হবে এটি।
আন্তর্জাতিক অঙ্গণে তার পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের এলোমেলো করে দিয়ে যাওয়া সম্পর্কগুলো নতুন করে সক্রিয় করে তোলার অঙ্গীকার করেছেন ডেমোক্র্যাটদলীয় এই প্রেসিডেন্ট।
মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের প্রেসসচিব জেন সাকি বলেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম দিকের বহুপক্ষীয় আলোচনারগুলোর একটির আয়োজন করতে যাচ্ছেন বাইডেন। এতে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অংশীদার ও মিত্রদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হবে।
চীনের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যেই চার দেশের জোট হিসেবে কথিত ‘কুঅডের’ নেতাদের সঙ্গে প্রথম বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন বাইডেন।
এর আগে জেন সাকি ও ভারত বলেছে, আলোচনায় বাইডেনের দুটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার জলবায়ু পরিবর্তন ও করোনা মহামারীও স্থান পাবে।
এক বিবৃতিতে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এ বৈঠকে যৌথ স্বার্থসংশ্লিষ্ট বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা হবে। এতে একটি স্বাধীন, উন্মুক্ত ও একীভূত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সুরক্ষায় সহযোগিতার বাস্তবসম্মত ক্ষেত্রগুলো নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বিনিময় হবে।
বৈঠকে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যেমন অংশ নেবেন, তেমনি জাপানি প্রধানমন্ত্রী ইশিহিডো সুগা ও অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনও থাকবেন।
এতে সমুদ্রসীমার নিরাপত্তা এবং এশিয়ায় করোনা প্রতিরোধে নিরাপদ, যথাযথ ও সাশ্রয়ী টিকার নিশ্চয়তার কথাও থাকছে।
বৃহস্পতিবার মোদির সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলেছেন সুগা। এ সময়ে তারা পূর্ব ও চীন সাগরের অবস্থান চীনের একতরফাভাবে পরিবর্তনের চেষ্টা এবং জিনজিয়াং ও হংকংয়ের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়েও তারা আলোচনা করেন।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেন, বিশ্বের জরুরি প্রতিকূলতাগুলো মোকাবিলায় কুঅডের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।
তবে চীন নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এই জোটে কোনো একক প্রতিযোগীকে নিয়ে কথা বলা হচ্ছে না।
এর আগে ১৮ ফেব্রুয়ারি এই চার দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে বৈঠক হয়েছিল। তখন মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার প্রতি তারা জোর দিয়েছেন।